গলাকেটে অটোচালককে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিল হত্যাকারীরা

মুন্সীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আশরাফুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় লোমহর্ষক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে দুই ভাই মো. রাজেল ও মো. রুবেল, এবং হাসান ও মো. আকরাম মোল্লা।

বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজনিন রেহেনার কাছে চারজনই হত্যার পুরো ঘটনা স্বীকার করেছে। সদ্য উদ্বোধন হওয়া মুন্সীগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে এই চার জনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন তিনি।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা লৌহজং থানার এসআই রাকিবুল হোসেন এই তথ্য দিয়ে জানান, হত্যাকাণ্ডটির সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে এই স্বীকারোক্তি মামালাটিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিলো।

মারা যাওয়ার আগে গলা কাটা অবস্থায়ই আশরাফুল মাটিতে দুটি নাম লিখে যান। এই নাম ধরেই ১২ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সকল হত্যাকারী ও ছিনতাই হওয়া অটোটি চার হাত বদলের সকলকে গ্রেফতারে সমর্থ হন। এই ঘটনা পুলিশের বড় একটি সাফল্য। এতে স্পষ্ট হয়েছে আন্তরিক চেষ্টা অল্প সময়েই অনেক বড় ঘটনারও রহস্য উদঘাটন সম্ভব এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা যায়।

আইন বিশেষজ্ঞ ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেনের নির্দেশনা এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে তিনটি টিমে রাতভর অভিযান চলে। এর মধ্যে একটি টিমে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশাদুজ্জামান এবং আরেক টিমে নেতৃত্ব দেন লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসাইন।

পুলিশ জানায়, চারজনের কথায় পুরো হত্যার সঠিক চিত্র বেরিয়ে এসেছে। অটোরিকশা চালক আশরাফুল ইসলামকে ছুরি দিয়ে জবাই করেছে রুবেল।

অটোর সামনে চালকের বামপাশে বসা হাসান আশরাফুলের একহাত চেপে ধরে আর ডানপাশে বসা রাজেন অপর হাত চেপে ধরে। আর পেছনে বসা আকরাম প্রথম গামছা দিয়ে গলায় চেপে ধরে। এরপরই পেছনের আরেক সিটে বসা রুবেল গলায় ছুরি চালায়। পরে তাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশের ঝোপে ফেলে দেয়। আর রক্তমাখা ছোড়াটি ফেলে দেয় পাশের গোয়ালী মান্দ্রা খালে। এর পর অটোরিকশা নিয়ে চলে যায় শ্রীনগর। সেখানেই গিয়ে আমির হোসেনের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে অটোরিকশাটি।

এদিকে অটো ক্রয়ের সাথে জড়িত চোরাই চক্রের সদস্য গ্রেফতারকৃত অপর চারজন হলো আমির বেপারী (৪০), তোফায়েল (৪০), সবুজ শেখ (৩০), কাজল শেখকে (৩১) এবং পরে গ্রেফতার হওয়া অপর আরেক অটো চোরাই সদস্যসহ পাঁচ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রীনগরের বাঘড়ার থেকে রুবেল আর আকরাম লৌহজংয়ে যাওয়ার জন্য আশরাফুলের অটোরিক্সা ভাড়া করে। পরে শ্রীনগরের বেজগাঁও পুরোনো ফেরি ঘাট এলাকা থেকে অটোতে ওঠে হাসান ও রাজেন। পরে অটোটি লৌহজংয়ের কারপাশার নির্জন স্থানে এলে ঘাতকরা তাকে জবাই করে অটো নিয়ে পালিয়ে যায়।

তাকে গলা কাটা অবস্থায় স্থানীয়রা নিয়ে যায় লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে আবার জ্ঞান ফিরলে এই সময় কাগজে কলম দিয়ে লিখেন শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল নাম্বার। এরপরই মোবাইলে স্বজনদের খবর দেয়া হয়। শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় চিকিৎসক ঢাকায় রেফার্ড করেন। স্থানীয়রা অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় রওনা হন। পথে মাওয়া থেকে স্বজনরা এসে অ্যাম্বুলেন্সে উঠেন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর আশরাফুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ময়না তদন্তের পর বুধবার রাতে বাঘরা কবরস্থানে দাফন করা হয় আশরাফুলকে। আশরাফুলের স্ত্রী রুনা আক্তার ছয় মাসের কন্যা মরিয়মকে নিয়ে এখনও আহাজারি করছেন।

এদিকে, আশরাফুলের বাবা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে লৌহজং থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আশরাফুল ইসলাম শ্রীনগরের বাঘারা গ্রামের অধিবাসী। তাকে হত্যার সাথে জড়িত চারজনই একই এলাকার বাসিন্দা।

আপনি আরও পড়তে পারেন